অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতা ও পরদিন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এড়িয়ে গেলেও নীরবেই রাখা হয়েছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ।
অর্থাৎ আগের ন্যায় আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরেও কালোটাকা সাদা করার এ বিধান থাকছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সুত্র জানায়, নতুন আইনে কালোটাকা দিয়ে জমি, প্লট, ফ্ল্যাট কেনা যাবে। এজন্য আগের নিয়মেই কর দিয়ে সব বৈধ করা যাবে। তবে একাধিক জমি-ফ্ল্যাটের জন্য ২০ শতাংশ বাড়তি হারে কর দিতে হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দিয়েও কালোটাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্প স্থাপনের সুযোগ থাকছে।
এর বাইরেও নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যাবে। আর সাদা করা এ অর্থ শিল্পোদ্যোগ বা শিল্প কারখানা সংস্কার, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, ইমারত বা অ্যাপার্টমেন্ট বা ভূমি ক্রয় ও উন্নয়ন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ, পণ্য ও সেবা উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে।
এদিকে, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি এড়িয়ে যান। বাজেট বক্তৃতার কোথাও এ নিয়ে কোনও কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
কালো টাকার বিষয়টি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলেছেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আলোচনায় না রাখা অস্বাভাবিক।
এর জবাবও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটোরত্তর সংবাদ সম্মেলনে কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "গত অর্থবছর বাজেটে কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে সংসদে কথা বলেছিলাম। কারন আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম নির্দিষ্ট খাতে নির্দিষ্ট পরিমান কর দিয়ে কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করে নেয়া যাবে।"
তিনি বলেন, "আপনারা জানেন, আপনারাই রিপোর্ট করেছেন, কেউ সে সুযোগ নেয়নি। যেহেতু কেউ আসেনি তাই আমরা মনে করছি কারো অপ্রদর্শিত অর্থ নেই।"
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার যেসব সুযোগ দিয় তার অন্যতম ছিলো বিদেশে অবস্থিত যে কোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। এক্ষেত্রে, বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি দেশে না আনা হলে এর ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
এছাড়াও, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি দেশে না আনা হলে ১০ শতাংশ এবং নগদ প্রেরিত অর্থের ওপর ৭ শতাংশ হারে কর পরিশোধ করে তা বৈধ করে নেয়া যাবে।
কিন্ত ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত থাকলেও গত ১১ মাসে কেউ এ সুবিধা নেয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায় বছরে বাংলাদেশে দূর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্ট কমপক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমানের অর্থ বিদেশে পাচার হয়। এর সবটাই কালো টাকা।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এসব টাকা চলে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ) তাদের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আমদানি-রপ্তানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কারসাজি আর হুন্ডির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে।
টিআইবিসহ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলে থাকেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ নেয়ার নামে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক।